Sunday, September 24, 2023
সব খবররোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরা কঠিন

রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরা কঠিন

ওয়ান ওয়েস্ট, একটা উদাহরণ।প্রায় ৫০ হাজার রোহিরঙ্গার গত ৫ বছরের ঠিকানা এখন ওয়ান ওয়েস্ট।

 

 

কুতুপালং। উখিয়ার আন্ডারে। ২০১৭-র ২৫ অগাস্ট, মায়ানমারে সেনা অভিযানের পর পালিয়ে আসা ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঠিকানা এখন কুতুপালং, ঘুমধুম, বালুখালি, থংখালির মতো এলাকা।মাঝের ৫ বছরে যে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ লাখ। শরণার্থীদের বেশিরভাগই শিশু এবং মহিলা।কিন্তু কবে ফিরতে পারবেন দেশে জানা নেই কারোর। কিন্তু ফিরতে চান একটু নিরাপত্তার আশ্বাস পেলেই।কিন্তু ওই যে কথায় আছে না, চাইলেই কি পাওয়া যায়। পূর্ব অভিজ্ঞত তেমনই বলছে।চট্টগ্রাম থেকে কক্সসেস বাজার যাওয়ার পথে টেকনাফের আগে উখিয়া। সেখানে ৫ বছর ধরে দরমার অস্থায়ী শিবিরে ঠাঁই নেওয়া শরণার্থী সাহারা খাতুন, তা জানেন জীবন দিয়ে। নব্বুইয়ের দশকে ঠাঁই নাড়া হতে হয়েছিল সাহারাকে।পরে মায়ানমার-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পর ফিরেছিলেন, দেশ, মানে মায়ানমারে।কিন্তু ফেরার পরই ফের নির্যাতনের শিকার হয়েও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেও আর পারেননি সাহারা।ছেলেটা নিখোঁজ।বরকে বিনা পয়সায় খাটতে দেখেছেন মিলিটারি ক্যাম্পে।সেই বরও আজ নেই।সে অর্থে পিছুটান না থাকলেও ফিরতে চান সাহারা, একটু নিরাপত্তা আর মায়ানমারের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি পেলে।যতদিন তা না হচ্ছে, কুতুপালংয়ের শিবিরের স্কুল-কমিউনিটি সেন্টার আর এনজিও-র কর্মীরা ভরসা।সঙ্গে বাংলাদেশের সাহায্য।আবার আব্দুল্লা হাবিব বা ক্যাম্প ওয়ানের হেড মাঝি মহম্মদ আমিনও ফিরে যেতে চান রাখাইনে।চোখের সামনে দেখেছেন কেমন যেন পরজীবী হয়ে যাচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম।মায়ানমারে চাষাবাদ ছিল। এখানে শরণার্থী ক্যাম্পে ডোল বা সাহায্য ছাড়া কিছু করার নেই। সপ্তাহান্তে মেলে চাল-ডাল, তেল-গ্যাস। কিছু হাত খরচও।কিন্তু সময় কাটবে কি করে ? অতিরিক্ত ভয় ক্ষমতা নেই। পরবর্তী প্রজন্মের সময় কাটে শুধুই আড্ডায়।আর সামনে প্রলোভন। ওয়ান ওয়েস্ট থেকে নাফ নদী ও জঙ্গল আড়াই বা তিন কিলোমিটার।পাচার হচ্ছে সোনা, মাদক থেকে আগ্নেয়াস্ত্র।টাকার প্রলোভনে যে ফাঁদে পা দিচ্ছেন উদ্বাস্তু হওয়া যাওয়া তরুণ প্রজন্ম।শিবিরের বাইরে গিয়ে যে কাজ করে উপার্জন করবেন তেমন উপায় নেই। আবার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বেড়াতে দিলেও বিপদ।মূল স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিতে চাইবেন অনেকেই।অনুমতি নিয়ে যারা বাইরে যায়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না ফিরলে জারি হয় হুলিয়া।আসলে এই শিবিরেই গত ৫ বছরে কর্তৃত্ব তৈরি করে ফেলা জঙ্গি সংগঠন আরসা, চায় না বাংলাদেশে ঠাঁই নেওয়া রোহিঙ্গারা দেশে ফিরুক বা সমস্যার সমাধান হোক। কারণ, আরসা মানে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির টিকি বাঁধা পাকিস্তানে।অভিযোগ পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অস্ত্র ঢুকছে, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে।অভিযোগ যে একদম উড়িয়ে দেওয়া যাবে না তার প্রমাণ গত ১৪ দিনে ৭ জনের খুনের ঘটনা।বা তার আগে জনপ্রিয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লার মৃত্যু।এই সেপ্টেম্বরে খুন হয়ে গিয়েছেন, দেশে ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের এককাট্টা করা মুহিবুল্লা। আর বাংলাদেশের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বাস্তু স্মৃতি, এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযোদ্ধারা, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বড় হাওয়া প্রজন্মকে। উদ্বাস্তু হওয়ার কষ্ট, জীবন দিয়ে বোঝা আওয়ামী লিগ নেত্রী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে ঠাই দিয়ে উদার বা মহানভবতার পরিচয় দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পাঁচ বছর বাদে প্রশ্ন উঠছে, আর ক’দিন ! যে কারণে বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদকে সফররত ভারতীয় সাংবাদিকদের সামনে বলতেই হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিয়ে প্রথম দিকে অনেকে আশ্বাস দিয়েছিল।কিন্তু তুরস্ক, কানাডা বা আমেরিকা সহ অনেকেই আর সেভাবে সহযোগিতা করেনি।পরামর্শ দেওয়ার, শরণার্থী শিবিরে এসে খুঁত ধরার অনেকেই আছেন।কিন্তু এত রোহিঙ্গাকে ভালভাবে রাখতে বাংলাদেশই বা কি করতে পারে! সত্যিই বেশি কিছু করা কঠিন।ছোট টিলার ওপর গজিয়ে ওঠা শিবিরের মানুষজনের জন্য।ইউক্রেন – রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু।সহজ কথায় ইউরোপ, আমেরিকার মতো সংস্থাগুলো ইউক্রেনকে নিয়ে বেশি আগ্রহী।মায়ানমার, রোহিঙ্গা, বাংলাদেশ প্রায়রিটি লিস্টের নিচের দিকে।রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক শাখা, ইউএনএইচসিআর – র হিসেবই তা স্পষ্ট।২০২২- এ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ শরণার্থীর জন্য নাকি ৮৮ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। আর এ পর্যন্ত তার মাত্র ৪৪ শতাংশ মানে অর্ধেকেরও কম, সাহায্য হিসাবে আদায়ের প্রতিশ্রুতি মিলেছে।ফলে বিপদ বাড়ছে বাংলাদেশের। শিবিরে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের সংখ্যাও যে বাড়ছে। এক বছর, ২০২৪ – এর গোড়াতেই বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। ওপারে মায়ানমার জুন্টা সরকার নেত্রী আং সাঙ সুকি-কে জেলে বন্দি করে রেখেছে।চায় না রোহিঙ্গারা আর দেশে ফিরুক। এখনও মায়ানমার সেনা রাখাইনে অত্যাচার করছে বলে খবর।ওদিকে, ইউক্রেন – রাশিয়ার বিবাদ সহজে মিটবে এমন কোনও ইঙ্গিত নেই তাহলে ? কি হবে রোহিঙ্গাদের।উত্তরটা খুঁজছেন, উখিয়ার মতো আর ৩৪ টি শিবিরের মানুষজন।ফিরতে চাই বললেই কি আর ফেরা যায়? রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে ঘরে ফেরাটা এবার আরও কঠিন।

 

 

 

More News

বাংলাদেশের জন্য আলাদা ভিসা নীতি শুরু আমেরিকায় 

0
বাংলাদেশের জন্য আলাদা ভিসা নীতির শুরু আমেরিকার।সেই নীতি প্রণয়ন শুরু করা হয়েছে হয়ে বলে জানিয়েছে...

বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ঢাকা, বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে মৃত ৪

0
টানা বৃষ্টিতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে ৪ জনের জনের মৃত্যু হয়েছে।মৃতদের মধ্যে ৩ জন একই পরিবারের...

বাংলাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গির দাপট, সর্বোচ্চ মৃত্যু 

0
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের হার। চলতি বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে...