ভারত যা পারেনি, তা করে দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। নদী নিয়ন্ত্রণ বা দূরত্ব কমাতে বা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিতে ভারতের এখনও যেখানে ড্রেজিং থেকে সেতু ভরসা, সেখানে বাংলাদেশ বন্দর এলাকা, চট্টগ্রাম, কর্ণফুলী নদীর তলায় তৈরি করে ফেলেছে, সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা সুরঙ্গ।
যার আগে পরে আরও দু কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড ধরলে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। নামকরণ অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর নামে। মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা সহ অন্য ব্যবস্থা চূড়ান্ত হয়ে গেলে, শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের জেরে চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ আসায় আর কোনও বাধা পড়বে না। উল্টে, নাব্যতা ইস্যুতে এগিয়ে থাকবে কর্ণফুলি নদী। এটা, আসলে পরিবর্তিত বাংলাদেশের একটি উদাহরণ। বঙ্গবন্ধু কন্যা তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের স্লোগান দিয়েছিলেন। আর এবার ২০২৪ – এর জানুয়ারিতে হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনের আগে স্লোগান দিয়েছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ, কতটা উন্নয়নের ডানায় ভর করে এগিয়েছে দেখতেই, এবারের যাত্রায়, ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রাপ্তি অনেকটা বিস্ময়। দক্ষিণ বাংলাদেশ সবসময় উর্বর, শস্য ভান্ডার। কিন্তু দূরত্ব এবং নদী মাতৃক দেশের কারণে, উত্তরের বাজারে উৎপাদিত সেই শস্য পাঠানোই ছিল একটা বড় সমস্যা।পদ্মার পাড়ে মাওয়া, গোয়ালন্দ বা রাজবাড়িতে দীর্ঘ লম্বা ট্রাকের সারি, ক’দিন আগেও ছিল, নিত্যদিনের ছবি। ক ‘ মাস আগে উদ্বোধন হওয়া প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু বদলে দিয়েছে যে প্রেক্ষাপট।সেই সঙ্গে দক্ষিণ বাংলাদেশজুড়ে আরও ৩৫ টি ছোট বড় সেতু, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের যানবাহনের গতি বাড়িয়েছে। ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে। চট্টগ্রামেও তাই। কক্সেস বাজারে প্রায় সমুদ্রের মধ্যে রানওয়ে, উন্নয়নের গতি কোনও দিকে তা বোঝার জন্য এটাই যথেষ্ট।ঢাকার বিমানবন্দর থেকে মেট্রো লাইন শহরে ঢুকে আরও বিস্তীর্ণ হচ্ছে।সঙ্গে এলিভেটেড রোড।যা আগামী ক ‘ বছরের মধ্যে, যানজটে হাসফাঁস করা ঢাকাকে মুক্তি দেবে বলে আশায় বুক বাঁধছেন মানুষজন।সে কারণে দেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ গর্ব করে বলতে পারছেন, বদলটা আর কথার কথা নয়। জনজীবনকে স্পর্শ করছে এই বদল। উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে। যখন পরিকাঠামোর সব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে। পরিকাঠামো উন্নয়নের এই গতির হাত ধরেই হচ্ছে আর্থিক উন্নয়নও। দ্রব্যমূল্য – মুদ্রাস্ফীতি, এই উপমহাদেশের মতো হ্রাস করছে বাংলাদেশকেও। প্রত্যাশা মতো চাকরি বা মাইনে না পাওয়া বেকার যুবক – যুবতীদের মধ্যে হতাশাও আছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস – র হিসাব অনুযায়ী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতকোত্তর ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার। আনুমানিক শ্রম সংস্থা, আইএলও- র হিসাব, বাংলাদেশে শ্রমশক্তি বছরে গড়ে ২ শতাংশ হারে বাড়ছে। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস – র হিসেব, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কর্মক্ষম ২৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার। যার মধ্যে পুরুষ ১৪ লাখ। সব মিলিয়ে শ্রমশক্তির অনেকটা কর্মহীন।তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ মানছেন সে কথা।বলছেন, সব বেকারকে তো চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে প্রচুর বেকারের বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থান হয়েছে। গত নির্বাচনে শাসক দল আওয়ামী লিগের স্লোগান ছিল, তারুণ্যই শক্তি। তারুণ্যই সমৃদ্ধি। ঢাকা বা চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে থাকলেই যা বোঝা যায়। ব্যাকপ্যাক বা ট্রলিব্যাগ নিয়ে, কাতার এয়াওয়েজের বোডিং কাউন্টারের সামনে ভিড় দেখলেই। দাবি করা হচ্ছে, ঘরোয়া উৎপাদন বৃদ্ধির জেরে দেশেও মাথাপিছু আয় বাড়ছে। ২০০৬ – এ যা ছিল ৫৪৩ ডলার, ২০২২ – এ যা নাকি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ ডলার। ডক্টর হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির বর্তমান হার ৯ শতাংশেরও কম। দেড় কোটি গরিব মানুষকে নানা রকম সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। গত ৩ বছরে বাংলাদেশে একজনও অনাহারে মারা যাননি। গ্রামাঞ্চলে সেই অর্থে কোনও কুড়ে ঘর নেই। যদিও বিরোধীরা অবশ্যই সরকার পক্ষের এই দাবির সঙ্গে একমত নন। তাদের দাবি, অর্থনীতির এই চাকচিক্যের অনেকটাই বিদেশ থেকে আসা অর্থ বা রেমিট্যান্সের বলে বলিয়ানা। গ্রামাঞ্চলে গত ক’ বছরে প্রচুর বাড়ি তৈরি হওয়া থেকেই যা বোঝা যায়। কিন্তু পাশাপাশি স্মার্ট ফোন – ইন্টারনেট নির্ভর অর্থনীতির ডিজিটালের সুযোগ মিলছে গ্রামে। প্রত্যন্ত এলাকায় ফলে আরব দুনিয়া বা কানাডা – আমেরিকা, টাইম জনের ফারাক ছাড়া বাংলাদেশের অনেকের কাছে এখন পাশের বাড়ি। স্মার্ট হচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ভোটের আগে। আর তার অন্যতম সেনাপতি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদও বলতে পারছেন সামনের ক ‘ বছরে উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে, সব পরিকাঠামো প্রকল্প নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গেলে। আরও বদলে যাবে বাংলাদেশ।